বাউফলে ফসলি জমিতে ইট বালুর ব্যবসা, কমছে কৃষি উৎপাদন
বাউফলে ইট-বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। এসব জমিতে ইট-বালু রেখে ব্যবসা করছেন তাঁরা। এর বিরূপ প্রভাবে আশপাশের জমিতেও ফসল উৎপাদনের হার কমছে।
বাউফল উপজেলায় রয়েছে ৩৫ হাজার ১শ ২৩ হেক্টর ফসলি জমি। এতে ৪৮ হাজার কৃষক চাষাবাদ করেন। তিন ফসলি এসব জমিতে নজর পড়েছে এক দল অসাধু ইট-বালু, পাথর-খোয়া ব্যবসায়ীর।
কৃষকদের কাছ থেকে কিনে বা ভাড়া নিয়ে এসব জমিতে ইট-বালু, পাথর-খোয়া রেখে ব্যবসা করছেন তাঁরা।
এ কারণে দিন দিন ফসলি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কিত সংশ্নিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালবাড়িয়ার চর, পৌরসভার বাংলাবাজার, কালাইয়া লঞ্চঘাট, কালিশুরি, বাহেরচর, কাশিপুর, কনকদিয়ার মাঠের পর মাঠ ফসলি জমিতে ইট-বালু, পাথর-খোয়া রেখে চলছে ব্যবসা। ট্রলিতে ভরে দিনরাত এসব জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কাঁঠালবাড়িয়ার চরের দাসপাড়ার এমএ বশার ডব্লিউ গংয়ের মালিক কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি শিরিন জানান, এ চরে তাঁদের ৪৫ শতাংশ জমিতে ধান ও আলু চাষ করতেন কৃষক। এখন কৃষক জমি চাষ করতে চাচ্ছেন না। তাঁদের জমির পাশের জমিতে বালু রেখে ব্যবসা করা হচ্ছে।
কার্তিক সাহা জানান, কাঁঠালবাড়িয়ার চরে তাঁর ৭৬ শতাংশ কৃষিজমি আছে। তাঁর চাষাবাদ করা জমির উভয় পাশে বালু ব্যবসায়ীদের বালুর মাঠ। সেখানে তাঁরা ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করে ব্যবসা করছেন।
পাঁচ বছর আগেও তাঁর জমিতে ধান উৎপাদনের পর রবি ফসল, কপি ও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনালি ধানের পর সবুজের সমাহার ছিল ক্ষেতজুড়ে। কিন্তু এখন ফসল হয় না বলে কৃষক এ জমি আর বর্গা চাষ করতে চাচ্ছে না।
কাঁঠালবাড়িয়ার চরের কৃষক আব্দুল আলী বলেন, ‘এ চরটি ছিল মোগো খাওয়া-পরার সম্বল। আগে ক্ষেতে যাইতাম মোগো সোনালি ধানের ছড়া দেখিতে। এ্যাহন চাইয়া দ্যাহি, হেই ক্ষেত বালিতে সাদা আর সাদা।’
কালাইয়া-বাউফল-বরিশাল মহাসড়কের পাশেই বসবাস করেন আদম মিয়া। তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের বালু ব্যবসার কারণে দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়। বাতাসে বালু উড়ে এসে বাড়িঘর, গাছপালা সব সাদা হয়ে যায়।
কাঁঠালবাড়িয়ার জমির মালিক মিলন সিকদার জানান, তাঁর জমিতে এক সময় প্রচুর ফসল হতো। কিন্তু ধান ও রবি ফসলের ভূমিকে নষ্ট করেছে বালু ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় সোনালি মাঠ এখন হয়েছে বালুর মাঠ।
বালু ব্যবসায়ী মস্তফা চৌধুরী বলেন, তিনি কৃষকের কাছ থেকে ৭২ শতাংশ জমি কিনে দেয়াল দিয়ে সিলেট স্যান্ড, টোপ বালু, লোকাল বালু বিক্রি করেন।
বালুতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দাসপাড়া সেতুর পাশে জাহাঙ্গীর এ ব্যবসা শুরু করেন। এর পর বাহাদুর কিরণ, মাসুদ চৌকিদার, মাহতাব,
রেজাউল, খোকন, জাহাঙ্গীর চৌকিদার, এসএম ফরিদ হোসেনসহ অর্ধশত ব্যবসায়ী এ ব্যবসায় জড়িত হন।
বালু ব্যবসায়ী এসএম ফরিদ হোসেন জানান, তিনি পরিবেশ রক্ষা করে এ ব্যবসা করেন।
দাসপাড়ার মানুষরা বলেন, কাঁঠালবাড়িয়ার চর এখন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। গ্রীষ্ফ্ম মৌসুমে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বসবাসকারী ১০ সহস্রাধিক গ্রামবাসীর বাড়িঘর, গাছপালা নষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শওকত হোসেন বলেন, ফসলি জমিতে বালু পড়লে মাটির অণুজীবের পরিমাণ কমে যায়। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই ফসলি জমিতে বালুর ব্যবসা করা যাবে না; যদি নিজের জমিতেও হয়।