আমাদের বাউফলস্বাস্থ্য

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবরাহে অনিয়ম

বাউফলে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক রোগীদের খাদ্য সরবরাহে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগীদের অভিযোগ, ঠিকাদার নিয়ম অনুযায়ী খাবার সরবরাহ না করে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রান্না ঘরে দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য পাঙাশ মাছ রান্না করছেন দুই রাঁধুনি। নোংরা পরিবেশে রান্না করা হচ্ছে এসব খাবার। যদিও দরপত্র অনুযায়ী ইলিশ, রুই অথবা সিলভার কার্প মাছ দেওয়ার কথা। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি দায়িত্বে থাকা ওই রাঁধুনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালের নাস্তাসহ দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য বরাদ্দ থাকে ১৭৫ টাকা। নাস্তার জন্য বরাদ্দ ৫০ টাকা। এ টাকায় একটি ডিম, সবরি কলা ও রুটি দিতে হবে। আর দুপুরে ও রাতের জন্য বরাদ্দ ১২৫ টাকা। প্রতি কেজি ইলিশ মাছের দাম ১ হাজার টাকা, রুই ৩০০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা ধরা হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন মাংস ও আর চার দিন মাছ দেওয়ার কথা।

তবে বেশিরভাগ সময়ই দেওয়া হয় পাঙাশ মাছ। সবজির জন্য লাউ, গোল আলু, কাচা পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়ার বরাদ্দ ৩৫ টাকা। খাবার সরবরাহের জন্য দায়িত্ব পান পার্শ্ববর্তী উপজেলা দশমিনার আ. হক নামে এক ঠিকাদার। পরে চুক্তিতে খাবার সরবরাহ করছেন বাউফলের আ. ওহাব মৃধা নামে একজন সাব-ঠিকাদার।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, দরপত্র অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। সকালের নিম্নমানের নাস্তা, দুপুর ও রাতে অধিকাংশ সময় পাঙাশ মাছ দেওয়া হয়। যে সবজি দেওয়া হয় তা পরিমাণে খুবই কম। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি উপজেলার তাঁতেরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা বেগম জানান, তার দুই সন্তান অসুস্থ। তারা সাত দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। এই সাত দিনের চার দিনই দুপুর ও রাতের খাবারে পাঙাশ মাছ দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন দিন দেওয়া হয়েছে ব্রয়লার মুরগি। পৌর শহরের বাসিন্দা মো. মকবুল গাজী বুকে ব্যথা নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি জানান, তিন দিনের মধ্যে দুদিন দুপুর ও রাতে দেওয়া হয়েছে পাঙাশ মাছ, এক দিন দেওয়া হয়েছে ব্রয়লার মুরগি।

আবদুল হালিম মৃধা নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তার বাবা ১৭ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি তার বাবার সঙ্গেই থাকেন। হাসপাতালের যে খাবার দেওয়া হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের দাবি করে তিনি আরও জানান, প্রায় বেলায় পাঙাশ মাছ দেওয়া হয়। একই অভিযোগ করেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা একাধিক রোগী ও তার স্বজনরা। তারা বলেন, অনেক রোগী পাঙাশ মাছ খেতে পারেন না। এতে অনেকে বাইর থেকে নিয়ে আসা খাবার খেয়ে থাকেন। যাদের বাইরে থেকে খাবার দিয়ে আসা সম্ভব হয় না, তারা বাধ্য হয়েই হাসপাতালের এসব খাবার খেয়ে থাকেন।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে বরাদ্দের বড় অংশ আত্মসাৎ করেন ঠিকাদার। ওই টাকার ভাগ নিচ্ছেন হাসপাতালের কর্মকর্তাও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সরবারহকারী আ. ওহাব মৃধা বলেন, প্রতিদিন ১৭৫ টাকা বরাদ্দ; যাতে ১২-১৩ শতাংশ ভ্যাট ও অফিস খরচ দেওয়ার পরে থাকে ১৩০-১৪০ টাকা। যা দিয়ে তিনবেলা খাওয়ানো কীভাবে সম্ভব। তারপরও ভালো খাবার সরবরাহ করতে চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আবদুর রউফ বলেন, খাবারের মান উন্নয়নে কাজ করছি। যে অভিযোগ পেয়েছি, তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, রান্নাঘর দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি। সর্বশেষ দেড় কোটি টাকায় হাসপাতাল সংস্কারকাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। রান্নাঘর সংস্কার করার জন্য ঠিকাদারকে একাধিকবার বলার পরেও তিনি কাজ করে দেননি।

পটুয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *